সব বাড়িতে মাস্ক পৌঁছে দেবে জাপান

জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরও রাজধানী টোকিও এবং জাপানজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া রোগীর সংখ্যা সমানে বেড়ে চলেছে। রাজধানীতে এখন দৈনিক দু শর মতো শনাক্ত হচ্ছে।

ভাইরাস সংক্রমণ সমানে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। জরুরি অবস্থা জারি করাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয় বলে একদল মনে করছেন। অন্যরা বলছেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর থেকে নেওয়া পদক্ষেপের ফল ঠিক এ মুহূর্তে জানা সম্ভব নয়। তাই বলে আগে থেকে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। দেশের নাগরিক সমাজের অধিকাংশ মনে করছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তৃত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারের ঢিলেঢালা আচরণ সংক্রমণ লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বিনা মূল্যে মাস্ক সরবরাহ কার্যক্রম দেশের প্রতিটি বাড়ির ঠিকানায় ডাকযোগে দুটি করে কাপড়ের তৈরি মাস্ক পাঠানো হবে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসেবে মাস্ক ব্যবহারের উপদেশ সরকার শুরু থেকে দিয়ে গেলেও মাস্কের ঘাটতির ফলে নাগরিকেরা এখন আর এগুলো কেনার সুযোগ পাচ্ছেন না। অনলাইন কালোবাজারে মাস্ক যে কেবল চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে শুধু তা-ই নয়, অনেকে মাস্ক সরবরাহের নামে পয়সা হাতিয়ে নিলেও ক্রেতারা তা পাচ্ছেন না। ফলে জাপান সরকার অনেকটা বাধ্য হয়েই জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে বিনা মূল্যে পুনর্ব্যবহারযোগ্য মাস্ক সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়। এসব মাস্ক এখন সাধারণভাবে আবে-নো-মাস্ক বা আবের মাস্ক নামে পরিচিতি পেয়েছে।

জাপান সরকারের এই বিনা মূল্যে মাস্ক সরবরাহ পরিকল্পনায় সরকারের মোট খরচ হবে ৪ হাজার ৬৬০ কোটি ইয়েন বা আনুমানিক ৪২ কোটি ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। মাস্ক প্রকল্প নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা চলতে থাকলেও সরকার এর উপকারী দিকগুলো তুলে ধরার ওপর জোর দিয়ে যাচ্ছে। চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিহিদে সুগা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ধুয়ে ব্যবহারযোগ্য এ রকম ১০ কোটি মাস্কের প্রতিটি ধোয়ার পর আবারও মোট ২০ বার ব্যবহার করা হলে একবার ব্যবহারযোগ্য ২০০ কোটি মাস্কের কাজ করবে এগুলো।

এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সমানে বেড়ে চলায় জাপানে আসন্ন গ্রীষ্মের নানা রকম আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান এখন একের পর এক বাতিল ঘোষণা করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ ইতিমধ্যে চেরি ফুল দর্শন উপভোগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে জাপানিদের। পাশাপাশি চেরি ফুল ফোটার এই সময়ের নানা রকম ব্যবসা থমকে গেছে। ফলে লোকসানের হিসাব এখন কষতে হচ্ছে সারা বছর ধরে এই সময়ের অপেক্ষায় থাকা ব্যবসায়ীদের।

জাপানে গ্রীষ্মের একটি বড় আকর্ষণ হচ্ছে আতশবাজি পোড়ানোর উৎসব। জাপানজুড়ে পুরো গ্রীষ্মকাল ধরে পালাক্রমে এটা চলে। আতশবাজি পোড়ানো উৎসবের আয়োজকেরা এখন এ বছরের আয়োজন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিতে শুরু করেছেন। টোকিওর সুমিদা নদী তীরের বিখ্যাত আতশবাজি উৎসবের তারিখ এ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল ১১ জুলাই। আয়োজকেরা গতকাল ঘোষণা করেছেন, প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে একে অন্যের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে এ বছরের উৎসব তারা বাতিল করে দিচ্ছেন।

টোকিওর উত্তর-পশ্চিমের নিইগাতা জেলার নাগাওকা শহরের আতশবাজি উৎসব হচ্ছে জাপানে, এ রকম সবচেয়ে বড় একটি উৎসব। গত বছর আতশবাজি পোড়ানোর মনোরম রাত্রিকালীন দৃশ্য উপভোগ করতে ১০ লাখের বেশি পর্যটকের ভিড় শহরে হয়েছিল। দুদিন ধরে চলা সেই উৎসব আয়োজকেরা এ বছর বাতিল ঘোষণা করেছেন। বাতিল হয়ে যাচ্ছে উত্তর-পূর্ব জাপানের সেন্দাই শহরের ঐতিহ্যবাহী তানাবাতা উৎসবও।

কেবল আতশবাজি উৎসবই নয়, বসন্ত আর গ্রীষ্মের ঐতিহ্যবাহী অন্যান্য নানা উৎসবের ওপর করোনাভাইরাস আঘাত হেনে চলেছে। জাপানে এ রকম আগে আর কখনো দেখা যায়নি।

যাদের এভিগান ওষুধ দেবে জাপান

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় কাজে লাগাতে আগ্রহী ২০টি দেশকে জাপান ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসায় ব্যবহারের ওষুধ এভিগান বিনা মূল্যে সরবরাহ করবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিৎসু মোতেগি সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বর্তমানে পরীক্ষা চলতে থাকা ওষুধ বুলগেরিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মিয়ানমার, সৌদি আরব, তুরস্কসহ ২০টি দেশকে জাপান দেবে। তিনি আরও বলেন, এই তালিকার বাইরে আরও ৩০টি দেশ এভিগান পাওয়া নিয়ে উৎসাহ দেখিয়েছে।

ফাভিপিরাভির ক্লিনিক্যাল নামের এই ওষুধ জাপানের ফুজি ফিল্ম হোল্ডিংয়ের একটি সহযোগী কোম্পানি তৈরি করেছে। ওষুধটি জাপানে এখনো ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার পর্যায়ে থাকলেও চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় এটা সফল প্রমাণিত হওয়ার খবর প্রচারিত হওয়ার পর এটা নিয়ে অনেক দেশ উৎসাহী হয়ে ওঠে। ওষুধটি কিনে বিভিন্ন দেশে বিতরণ করার জন্য জাপান সরকার একই সঙ্গে জাতিসংঘের প্রকল্প সেবা কার্যালয়কে ১০ লাখ ডলার দেবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এভিগানের ক্লিনিক্যাল গবেষণা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্প্রসারিত করে নিতে উৎসাহী দেশগুলোর সঙ্গে জাপান কাজ করবে।

Tags: , , ,

Leave a Reply