জাপানে ‘বাবার হোটেলে’ অর্ধকোটি মধ্যবয়সী!
জাপানে লাখ লাখ মধ্যবয়সী অবিবাহিত নারী-পুরুষ তাদের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে। এমনকি আর্থিকভাবে বাবা-মায়ের ওপর নির্ভর করে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ কারণে দেশটির জন্মহার দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। খবর দ্য ইনডিপেনডেন্টের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপানে বর্তমানে ৪৫ লাখ নারী-পুরুষ বেকার অথবা আধাবেকার। ৩৫ থেকে ৫৪ বছরের এই অবিবাহিত নারী-পুরুষ কার্যত বাড়িতেই বসে থাকে। গবেষণায় তাদের ‘অবিবাহিত পরজীবী’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বাবা-মায়ের ওপর নির্ভরশীল এই প্রজন্মের কারণে দেশটির জনশক্তি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ক্রমহ্রাসমান এই জনশক্তির চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
‘পরজীবী’ এই প্রজন্মকে একসময় নিজেদের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনাহীন হিসেবে বর্ণনা করা হলেও বর্তমানে তারা বেশ উদ্বিগ্ন। তাদের এই উদ্বেগের কারণ, তাদের আশঙ্কা, বাবা-মা মারা গেলে তাদের জীবন আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। অবশ্য এদের অনেকেরই রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সে ক্ষেত্রে দেশটির সামাজিককল্যাণ ব্যবস্থার ওপর চাপ আরও বেড়ে যাবে, যা ইতোমধ্যে দেশটির বর্ধিষ্ণু বৃদ্ধ মানুষের ভারে নুব্জ।
জাপানের জনসংখ্যা ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব পপুলেশন অ্যান্ড সোসাল সিকিউরিটি রিসার্চের এক পরিসংখ্যান মতে, দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা ১২ কোটি ৭০ লাখ।
২০৬৫ সালের মধ্যে এই জনসংখ্যা আট কোটি ৮০ লাখে নেমে আসতে পারে। ২০৬৫ সালের মধ্যে দেশটির ৪০ শতাংশ জনসংখ্যা জ্যেষ্ঠ নাগরিকের মর্যাদা পাবে। ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স এমন একজন ব্যক্তির বিপরীতে ১.৩ জন শ্রমিক থাকবে। যেটা ২০১৫ সালে ছিল ২.৩ জন। অর্থনীতিবিদরা এই পরিস্থিতিকে ডেমোগ্রাফিক টাইম বোম্ব বা ‘জনমিতিক টাইম বোমা’ বলে বর্ণনা করেছেন।
জাপান সরকারের চলতি মাসে প্রকাশিত কিছু তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, দেশটিতে চিরকুমারের সংখ্যা ২০১৫ সালে সবেচেয়ে বেশি ছিল। ৫০ বছর বয়সীদের প্রতি চারজন পুরুষের মধ্যে একজন অবিবাহিত। পক্ষান্তরে প্রতি সাতজন নারীর মধ্যে একজন অবিবাহিত। এই অবিবাহিত জনগোষ্ঠীর জীবনাচরণ পর্যবেক্ষণ করে সমাজবিজ্ঞানী মাসাহিরো ইয়ামাদা ১৯৯৯ সালে ‘প্যারাসাইট সিঙ্গেলস’ বা ‘অবিবাহিত পরজীবী’ পরিভাষাটি চালু করেন।
মাসাহিরো বলেন, ১৯৯০ এর দশকে ২০ বছর বয়সীদের সুখেই দিন কাটছিল। তারা ভেবেছিল বয়স ৩০ এর কোটায় গেলেই তবে তারা বিয়ে করবেন। কিন্তু তাদের এক-তৃতীয়াংশই আর কখনই বিয়ে করেননি। তাদের বয়স এখন ৫০ বছর।’